কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালবাসে ?
১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ রবিবার , আদিকবি কৃত্তিবাবাস-এর জন্মোৎসব পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফুলিয়া বয়ড়ায় গিয়েছিলাম। জায়গাটিকে এখন সবাই কৃত্তিবাস বলেই ডাকে ।বিকেলে ছিল কবি সন্মেলন । সেখানেই গৌতম শর্মা বললো, ধীমানদা হাতছানি পত্রিকার জন্য একটি প্রেমের গল্প লিখতে হবে । আমি শুধু হাসলাম ।সন্ধে ৭টায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাড়ীর দিকে রওনা হলাম । ফুলিয়া পাড়া হয়ে দু’কিলোমিটার দুরে ফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড ।তারপর সোজা রেলগেট পেরিয়ে বাঁদিকে B.D. অফিস রেখে রবীন্দ্র পার্ক পেরিয়ে ডানহাতে ফুলিয়া বালিকা বিদ্যালয় রেখে সামান্য এগোতেই বাঁদিকে ফুলিয়া পলিটেকনিক । পলিটেকনিকের পিছনে যেতেই
কতদিন দেখিনি তোমায় তবু মনে পড়ে তব মুখখানি
স্মৃতির মুকুরে মম আজো তব ছায়া পড়ে রানি । ।
৩০ বছর কেটে গেছে,৩০ বছর! ১৯৮৩ সাল । আমার তখন ১৯, তার ১৩ ।অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে ।আমি কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । বিকেলে বাড়ী ফিরছিলাম।পলিটেকনিকের পিছনে নিম গাছতলায় আসতেই হঠাৎ একটি ঢিল এসে কপালে লাগলো ।ঊঃ করে উঠে কপাল চেপে ধরতেই সাইকেল থেকে পড়ে গেলাম । অমনি খিলখিল হাসি । রেগে গিয়ে বললাম, ঢিল মারলে কেন? আমি মারিনি, তার ছোট্ট জ্ববাব। তাহলে কি ভূতে মারলো, আরো রেগে বললাম আমি । ‘জানতো এটা নিমগাছ,নিমগাছে ভুত থাকে, ভুতেই মনে হয় ঢিল মেরেছে,’হেসে লুটিয়ে পড়লো সে । আরো রেগে আমি বললাম,’ভুত নয়,পেত্নী ঢিল মেরেছে, আর সেই পেত্নী হলে তুমি ।’ ‘কি আমি পেত্নী! তুমি তাহলে গেছো ভুত’,বলেই জিভ ভেঙ্গিয়ে সে বাড়ী চলে গেল ।
সোনার খাঁচায় দিনগুলি মোর রইলো না,
সে যে আমার নানা রঙ্গের দিনগুলি ।
B.D.অফিসের পিছনে বট গাছের তলায় আছে এক কাঁলী মন্দির ।অনেক প্রেম কাহিনীর সাক্ষী এই মাঁ কালী । কাঁলী মন্দিরের সামনের রাস্তার নাম মুখে মুখে হয়ে গেছে Lovers lane. কত ঘটনাই ঘটে এখানে । সেই যেবার মাঠপাড়ার একটি ছেলে ক্লাশ সেভেনের একটি মেয়েকে জোর করে সিঁদুর পড়িয়ে মারুতি গাড়ীতে তুলে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল,তখন থেকেই জায়গাটা বেশী পরিচিতি পেল। আমরা কতদিন দুপুরে ওখানে গল্প করেছি ।ভালই কাটছিলো দিনগুলো ।তখন ভ্যালেন্টাইনস ডে-র চল হয়নি।সরস্বতী পুজোর দিনটিই ছিল আমাদের প্রেম দিবস, এখনকার V’day । ঐদিন বাধানিষেধ বেশী থাকতো না । এক সরস্বতী পুজোর দিন আমরা সাইকেল চেপে কৃত্তিবাস বেড়াতে গিয়েছিলাম । কৃত্তিবাসের কাছেই গঙ্গা নদী বয়ে চলেছে ।সেখানে ওর দাদার এক বন্ধু আমাদের গল্প করতে দেখে ওর দাদাকে বলে দিয়েছিল। ও সেবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ।বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ ।ব্যস ওর বাইরে বেরোনো বন্ধ ।
দিনগুলো ভোলা গেলনা
স্মৃতিগুলো মোছা হ’লনা ।
ওর দাদা মস্তান ঠিক করেছিল আমাকে মারধোর করার জন্য । যাদের ঠিক করেছিল তারাই আমাকে সব বলে দেয় । আমার বন্ধুরা ওদের বাড়ী যায় ।এই নিয়ে জল অনেকদূর গড়িয়েছিল ।তখন মোবাইল ফোন চালু হয়নি । ওর এক বান্ধবীর মাধ্যমে খবরাখবর চলতো ।এভাবে আরো দু’বছর কেটে গেল । ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলো । কয়েকদিন দেখা হয়নি । সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল
শ্রাবণ মাসের সন্ধ্যাবেলা,
জানালার ধারে দাড়িয়ে ওর কথাই ভাবছিলাম আমি ।
দমকা হাওয়ার মত দরজা দিয়ে ঢুকলো সে
বললো, চল আমরা এক্ষুনি পালিয়ে যাই ,
‘কিন্তু কেন ? কি হয়েছে !’ উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন ছিল আমার ।
বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে , শ্রাবনের কুড়ি তারিখে ।
‘কিন্তু কোথায় যাব, আমার তো যাবার কোন জায়গা নেই ।’
যেখানে খুশি , ফুটপাতে ঘর বাঁধবো,মাঠে কাজ করবো।
সেই সন্ধ্যায় ওর হাত ধরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে রওনা দিলাম । অনেক ঘাত
প্রতিঘাত সহ্য করে ওর প্রেরণায় জীবনে প্রতিষ্ঠিভ হ’লাম।আমাদের এক ছেলে এক মেয়ে। সুখের সংসার।
গত জানুয়ারীতে আমার কালাজ্বর হয়,বাঁচার আশা যখন ক্রমশঃ বিলীয়মান তখন ওর সেবা শুশ্রুষায় আবার জীবন ফিরে পাই । কিন্তু….
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম তাহারে ধরিল জ্বরে
নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ পড়ে
আজ আমি একা,বড় একা ।পারিবারিক কিছু দ্বায়িত্ব সেরেই ওর কাছে যাব ।
০৬ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৫৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪